যাত্রী বেশে বাসের সবাই ডাকাত!
সম্প্রতি রাজধানী ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকায় ডজনখানেক বাস ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। গত ৯ জানুয়ারি, সাভারের ব্যাংক টাউন এলাকা থেকে আর বি পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন মামুন নামে একজন। মুহুর্তেই তার চোখ বেঁধে ফেলে দুবৃত্তরা। পরে টের পান, যাত্রী বেশে বাসের সবাই মূলত ডাকাত।
২০ জানুয়ারি প্রায় একই রকম ঘটনার মুখোমুখি হন, টাঙ্গাইলের সদর হাসপাতালের ডাক্তার শফিকুল ইসলাম সজীব। পরে ৩০ জানুয়ারি রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ২০ জানুয়ারি তিনি উত্তরার আব্দুল্লাহপুর এলাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী একটি বাসে টাঙ্গাইলে যাওয়ার জন্য এক বন্ধুসহ উঠেছিলেন। বাসে ওঠার কিছুক্ষণ পরেই যাত্রীবেশে ডাকাত দলের সদস্যরা তাদের হাত-পা ও মুখ বেঁধে সবকিছু কেড়ে নেয়। বাস নিয়ে ডাকাত দলের সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার এটিএম বুথে গিয়ে তার সঙ্গে থাকা এটিএম কার্ড থেকে টাকাও তুলে নিয়েছিল।
এসব ঘটনা আমলে নিয়ে, গত কয়েকদিনে ঢাকার আশেপাশে অভিযান চালিয়ে ছদ্মবেশী দুটি ডাকাত দলের ৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। একটির নেতৃত্ব দিতো দিলীপ ওরফে সোহেল, অন্যটি আবু জাফর বিল্পব।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- বিপ্লব, সজীব, জহির, নাঈম, দিলীপ সোহেল, আল আমিন, আজাদ ও আল আমিন (২)। তাদের কাছ থেকে বাসে ডাকাতি করার জন্য ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্রসহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্রের পাশাপাশি নগদ টাকাও উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারের আগে, ডাকাতির লোমহর্ষক বর্ণনাও দিয়েছে তারা, ফুটে উঠেছে রাতের মহাসড়কের নিরাপত্তার বেহাল দশা।
দিনের আলোয় কেউ ভ্যান চালক, কেউ ডাব বিক্রেতা। বাসের হেলপার কিংবা ড্রাইভার। রাত নামলেই পাল্টে যায় তাদের রূপ। পরিণত হয় দুর্ধর্ষ ডাকাতে। বাস ভাড়া নিয়ে ঘুরে ঘুরে যাত্রী তোলে। তারপর অস্ত্রের মুখে লুটে নেয় সর্বস্ব।
অনুসন্ধান বলছে, গ্রেপ্তারকৃতদের নামে দেশের বিভিন্ন থানায় হত্যাসহ একাধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে। জামিনে বের হয়ে তারা ফের এই পথে নেমেছে।
গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার শাহাদত হোসেন সুমা বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই পেশাদার অপরাধী চক্রের সদস্য। তাদের সবার বিরুদ্ধেই একাধিক ডাকাতি, ছিনতাইসহ খুনে মামলাও রয়েছে। কারাগার থেকে বেরিয়ে তারা আবার একই কাজে নিয়োজিত হয়।
গোয়েনন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা পৃথক দুটি দলে ভাগ হয়ে বাসে ডাকাতি করে বেড়াতো। তবে তারা প্রত্যেকেই একে অপরকে চিনে। কখনও কখনও তারা একসঙ্গেও ডাকাতি করেছে। একটি দলের নেতা বিপ্লব ও আরেকটির দলনেতা দিলীপ সোহেল। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি সহযোগীদের গ্রেপ্তারেও অভিযান চালানো হচ্ছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, শুধু বাসে যাত্রী তুলেই ডাকাতি নয়, এই চক্রের সদস্যরা সড়কে ট্রাক আটকিয়ে মালামাল ছিনতাইসহ সড়কের আশেপাশে থাকা দোকানপাট ও বাসাবাড়িতেও ডাকাতি করে। গত ১৬ জানুয়ারি ঝিনাইদহের বাসিন্দা ফয়সাল আহমেদ হৃদয় টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ফয়সাল অভিযোগ করেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ফতেপুর এলাকায় বাস নিয়ে আসা একদল ডাকাত তাদের একটি পণ্যবাহী ট্রাক আটকিয়ে চালক ও সহযোগীকে বাসে তুলে নিয়ে পণ্যসহ ট্রাক নিয়ে চলে যায়। ওই ট্রাকে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার মালামাল ছিল।
Advertisement (sandha)
Advertisement (pabna sweet)
Advertisement (school)
No comments