যে ভাবে হত্যা করা হয় সিনহাকে
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাত। কক্সবাজার টেকনাফ সড়কের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনী থেকে সেচ্ছায় অবসরে যাওয়া মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ। এ মামলায় র্যাবের দাখিল করা অভিযোগপত্রের অন্যতম সাক্ষী শামলাপুর চেকপোস্টের কাছে অবস্থিত বায়তুন নুর জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. আমিন। তার বর্ণনায় উঠে আসে সিনহা হত্যার বিস্তারিত।
'লেটস গো' নামে একটি ভ্রমণবিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য প্রায় এক মাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকায় অবস্থান করছিলেন তিনি। ওই কাজে তার সঙ্গে ছিলেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ।
সিনহা নিহত হওয়ার পর পুলিশ দাবি করেছিল, 'সিনহা তল্লাশিতে বাধা দেন। এ সময় তিনি পিস্তল বের করলে চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ তাকে গুলি করে।' এসব বিষয় উল্লেখ করে এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
মামলায় একমাত্র আসামি করা হয় সিনহার সঙ্গী সিফাতকে। ওই মামলায় সিফাতকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর পর সিনহা যেখানে অবস্থান করছিলেন, সেই নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তার ভিডিও দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকেও পুলিশ আটক করে। নুরকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। পরে তারা জামিনে মুক্তি পান।
হত্যাকাণ্ডের ৬ দিন পর ২০২০ সালের ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে লিয়াকত-প্রদীপসহ ৯ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন। মামলায় র্যাবের দাখিল করা অভিযোগপত্রের অন্যতম সাক্ষী শামলাপুর চেকপোস্টের কাছে অবস্থিত বায়তুন নুর জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. আমিন। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে ঘটনার সময় মসজিদের ছাদে ছিলেস এই সাক্ষী।
তিনি আদালতে বলেন, ১ আগস্ট ছিল ঈদুল আজহা। ঈদের জামাত, পশু কোরবানি বিষয়ে কেন্দ্রীয় মসজিদের মাইকিংয়ের ঘোষণা শুনতে তিনিসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী মসজিদের ছাদে অবস্থান করছিলেন। ওই সময় এপিবিএনের চেকপোস্টে উচ্চস্বরে কথা শুনলে সেদিকে দৃষ্টি দেন। ওই সময় দেখা যায়, রুপালি রঙের একটি গাড়ির সামনে শামলাপুর ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকত পিস্তল তাক করে দাঁড়িয়ে আছেন। পাশে ব্যারিকেড দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন এসআই নন্দদুলাল। গাড়ির পূর্বে একজন এবং পশ্চিমে ২ জন এপিবিএন সদস্য দাঁড়ানো ছিলেন।
হাফেজ আমিন জানান, তখন লিয়াকত চিৎকার করে গাড়ি থেকে যাত্রীদের বের হওয়ার নির্দেশ দিলে গাড়ির পশ্চিম পাশ থেকে, দুই হাত ওপরে তুলে লম্বা চুলের এক যুবক বের হন। লিয়াকতের নির্দেশ পেয়ে এপিবিএনের ২ সদস্য ওই যুবকের হাত ধরে রাখে। লিয়াকত আবারও চিৎকার দিয়ে গাড়িতে থাকা ব্যক্তিকে বের হওয়ার জন্য বলেন। এর পর গাড়ির ড্রাইভিং সিটে থাকা ওই ব্যক্তি হাত ওপরে তুলে গাড়ি থেকে বের হন এবং লিয়াকতের দিকে সামনে একটু এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ান। এ সময়েই কোনো কথা না বলে লিয়াকত পরপর ২টি গুলি করেন।
এ ছাড়া অন্যান্য সাক্ষীর বক্তব্য থেকেও একই রকম বর্ণনা পাওয়া যায়। লিয়াকতের পর ওসি প্রদীপ এসে সিনহার মৃত্যু নিশ্চিত করেন বলে তারা উল্লেখ করেন।
Advertisement (sandha)
Advertisement (pabna sweet)
Advertisement (school)
No comments