এলাকাবাসীর সচেতনতায় দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেল কমিউটার এক্সপ্রেস ট্রেন
রেললাইন ভাঙা দেখে লাল গামছা ওড়াতে থাকেন স্থানীয়রা। বিষয়টি ট্রেনচালকদের নজরে পড়তেই তারা ট্রেন থামিয়ে দেন। এতে কয়েকশত ট্রেনযাত্রী অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেল ঈশ্বরদী-রহনপুরগামী ৫৭ নম্বর আন্তঃনগর কমিউটার এক্সপ্রেস ট্রেন।
৮ মে বুধবার সকাল ৮টায় পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের আওতায় ঈশ্বরদী-রাজশাহী রেলরুটের নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার লোকমানপুর রেলস্টেশন ঢোকার আগমুহূর্তে এ ঘটনা ঘটে।
ঈশ্বরদী লোকোমোটিভ ও ডিজেল কারখানার সহকারী লোকোমাস্টার (এএলএম) সাইফুল ইসলাম সবুজ জানান, বুধবার সকাল ৭টায় ঈশ্বরদী রেলওয়ে জাংশন স্টেশন থেকে ৫৭ নম্বর আন্তঃনগর কমিউটার এক্সপ্রেস ট্রেন রহনপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। ট্রেনটি নাটোরের আবদুলপুর রেলস্টেশন অতিক্রম করে রাজশাহী অভিমুখে যাওয়ার সময় সকাল ৮টার দিকে ট্রেনটি লোকমানপুর রেলস্টেশনে ঢোকার আগ মুহূর্তেই দেখা যায়, কয়েকজন এলাকাবাসী লাল গামছা ধরে রেললাইনের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। বিষয়টি তাৎক্ষণিক টের পেয়ে লোকোমাস্টার (এলএম) আজিজুর রহমান (ট্রেনের চালককে) ট্রেন থামিয়ে দিতে বলি। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় ঈশ্বরদী-রাজশাহীর মধ্যকার লোকমানপুর স্টেশনের ১ কিলোমিটার দূরে ১০ ইঞ্চি রেললাইন ভাঙা।
সহকারী লোকোমাস্টার (এএলএম) সাইফুল ইসলাম সবুজ আরও জানান, ৩০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেনটি লোকমানপুর রেলস্টেশনে প্রবেশ করছিল। এ সময় রেললাইনে লাল গামছা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ট্রেনটি থামানো হয়। পরে জানতে পারি প্রায় ১০ ইঞ্চি রেললাইন ভাঙা। তাৎক্ষণিক বিষয়টি পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের কন্ট্রোল অফিসে অবগত করা হয়েছে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে প্রকৌশলী-২ বীরবল মন্ডল জানান, রেললাইনে প্রায়ই ভাঙা দেখা যায়। তবে রেললাইনের ফিশপ্লেট বাঁধা থাকলে ট্রেনের গতি কমিয়ে ট্রেন চালালে দুর্ঘটনার কোনো সম্ভবনা থাকে না। আর ট্রেন যদি ৮০ কিলোমিটার গতিতে পারাপার হতো তবে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। খবর পেয়ে সেখানে তাৎক্ষণিক রেলওয়ে প্রকৌশলীরা ঘটনাস্থল উপস্থিত থেকে ট্রেনের গতি কমিয়ে কমিউটার এক্সপ্রেস পারাপার করা হয়েছে।
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) আনোয়ার হোসেন জানান, পাকশী কন্ট্রোল অফিসকে কর্তব্যরত ট্রেনের লোকোমাস্টার (এলএম) চালক সকাল ৮টার দিকে অবগত করেন। পরে ট্রেনের গতি কমিয়ে ১০ কিলোমিটার গতিতে কিছুটা বিলম্বে কমিউটার এক্সপ্রেস ট্রেনটি রাজশাহীর দিকে ছেড়ে যায়। এ রুটে বর্তমানে সব ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার জানান, স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সাল থেকে আবদুলপুর জংশন-রাজশাহী রেলরুটে রেললাইন স্থাপন করা হয়। এই রেলরুটের ট্রেনগুলোর গতি কমিয়ে চলাচল করানো হচ্ছে। এতে করে রাজশাহী থেকে চলাচলকারী সব ধরনের ট্রেন নির্ধারিত সময় থেকে বিলম্বে চলাচল করছে। ফলে শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে। স্থানীয় কিছু সচেতন জনসাধারণের কারণে প্রায় ছোট-বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাচ্ছে যাত্রীবাহী ট্রেন। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে দ্রুতই পুরানো রেললাইন সরিয়ে নতুন রেললাইন স্থাপন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
No comments