পাবনা-১ আসনে ২৫ কেন্দ্রে পুনঃনির্বাচনের দাবি আবু সাইয়িদের
পাবনা-১ আসনে পরাজিত ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ২৫টি ভোটকেন্দ্রের ফলাফল বাতিলপূর্বক পুনরায় নির্বাচন দাবি করেছেন।
সোমবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগে এ দাবি জানান তিনি।
লিখিত অভিযোগে অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, ‘পাবনা-১ আসনের ১২৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৫টি ভোটকেন্দ্রে সরাসরি অনিয়ম করা হয়েছে। নির্বাচনি বিধিবিধান লঙ্ঘন করে নৌকার প্রার্থী তার সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়ে জোরপূর্বক ভোটকেন্দ্র দখল ও ভোট কেটে সরাসরি ব্যালটবাক্সে ঢুকিয়ে দিয়েছে। এই সমস্ত কেন্দ্রের ব্যালট পেপারের মুড়ি অংশটি পরীক্ষা করলেই এর সত্যতা প্রমাণিত হবে।’
আবু সাইয়িদ বলেন, ‘যে সমস্ত ব্যালট পেপার কেটে জালভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে, ওই সমস্ত ব্যালট পেপারের মুড়িবই পরীক্ষা করলে দেখা যাবে, মুড়ি অংশে ভোটারদের কোনো টিপসই ও ভোটার নম্বর নেই। এ ছাড়া অনেক ব্যবহৃত ব্যালট পেপারের পেছনে প্রিসাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের স্বাক্ষর নেই।
এসব কেন্দ্রে ভোটারদের কেন্দ্রে আসায় প্রতিবন্ধকতা ও হুমকি-ধমকি দিয়ে প্রত্যাশিত অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এসব ভোটকেন্দ্রে সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাহী কর্তৃপক্ষ সহায়তা করেনি, বরং দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং অফিসার ও প্রশাসন তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন।’
অভিযোগপত্রে সুনির্দিষ্ট ২৫টি ভোটকেন্দ্রের নাম উল্লেখ করে আবু সাইয়িদ বলেন, ‘এ সমস্ত ভোটকেন্দ্রের সঙ্গে অন্যান্য ভোটকেন্দ্রের তুলনা করলে দেখা যায়, ভোট কেটে নেওয়া/দেওয়ার কারণে ভোটের ব্যবধান বহুগুণে অপ্রত্যাশিতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে নির্বাচনি ফলাফল জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।’
উল্লিখিত তথ্য-উপাত্তের আলোকে ভোটার ক্রমিক নম্বর না দেওয়া এবং প্রিসাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের স্বাক্ষর না থাকায় ভোটগুলো বাতিলযোগ্য। এমন পরিস্থিতিতে অবিলম্বে উক্ত ভোটকেন্দ্রের ফলাফল বাতিলপূর্বক পুনঃনির্বাচনের দাবি জানান তিনি। সেই সঙ্গে পুনরায় নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত ফলাফল সরকারিভাবে গেজেটভুক্ত না করারও দাবি জানান।
এ বিষয়ে অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, ‘ভোটের দিন সকাল থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে এমন অনিয়ম দেখেছি। নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো সহযোগিতা পাইনি। আমি ভোট বাতিল ও পুনঃনির্বাচন চাই। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর অভিযোগ দিয়েছি। আশা করছি, তিনি এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ভূমিকা রাখবেন।’
স্বতন্ত্র প্রার্থীর এই অভিযোগের বিষয়ে মতামত জানতে সোমবার রাত ৮টা ৫৫ মিনিটে নৌকার প্রার্থী ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মু. আসাদুজ্জামানের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও তারা ফোন ধরেননি।
এ বিষয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলপনা ইয়াসমিন বলেন, ‘এমন কোনো বিষয় জানা নেই।’
৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ঘোষিত বেসরকারি ফলাফলে পাবনা-১ আসনে নৌকার প্রার্থী শামসুল হক টুকু ৯৪ হাজার ৩১৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের অধ্যাপক আবু সাইয়িদ পেয়েছেন ৭২ হাজার ৩৮৭ ভোট। এই আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৩১ হাজার ৬১৬। ভোটকেন্দ্র ১২৫টি। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ছয়জন প্রার্থী। এর মধ্যে জামানত হারিয়েছেন চারজন।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পাবনা-১ আসনে মোট ভোট পড়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৬১৮। বাতিল হয়েছে ২ হাজার ৬৭৩ ভোট। ভোটের হার ৩৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
No comments