× প্রচ্ছদ ঈশ্বরদী পাবনা জাতীয় রাজনীতি আন্তর্জাতিক শিক্ষাজ্ঞন বিনোদন খেলাধূলা বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নির্বাচন কলাম
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ঈশ্বরদী খেলা প্রযুক্তি বিনোদন শিক্ষা



শিক্ষা সনদ দেখাতে পারেননি অধ্যক্ষ

উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য ছুটি নিয়ে ৫ বছর আমেরিকায় অবস্থান। বসে বসে বেতন উত্তোলন করেন। পুনরায় কলেজে স্বপদে ফিরে গিয়ে শিক্ষা সনদ দেখাতে পারেননি। যোগদানের ৭ বছর অতিবাহিত হতে চলেছে কিন্তু অধ্যক্ষ কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। মূলত উচ্চ শিক্ষার্থে নয়, ডিভি লটারিতে দীর্ঘ ৫ বছর ২৭ দিন আমেরিকায় অবস্থান করেন অধ্যক্ষ রোকসানা খানম। এ ঘটনায় দুদকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন গভর্নিং বডির সাবেক এক সভাপতি। ঘটনাটি ঘটেছে পাবনার বেড়া উপজেলার কাশিনাথপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজে। লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, ওই কলেজের অধ্যক্ষ রোকসানা খানম ২০১১ সালে মিথ্যাচার করে ডিজির অনুমতি ছাড়াই কলেজ গভর্নিং বডির তৎকালীন সভাপতি আবদুল কাদেরের কাছ থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য নিজ বেতনে ২ বছরের জন্য ছুটি নিয়ে আমেরিকায় যান। গত ০৯/০৫/২০১১ থেকে ০৮/০৫/২০১৩ পর্যন্ত আমেরিকা অবস্থান শেষে বাংলাদেশে এসে পুনরায় কলেজে যোগদান করার জন্য গেলে তখনকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি এস এম শাহাবুদ্দিন টুটুল উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে বললে তিনি দেখাতে ব্যর্থ হন। তখন কলেজ গভর্নিং বডি তাকে যোগদান করতে না দিয়ে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে। কলেজে যোগদান করতে না পেরে রোকসানা খানম পুনরায় আমেরিকায় চলে যান। ঘটনাটি প্রশাসন মহলে জানাজানি হলে গত ২৯/১০/২০১৩ তারিখে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে বেড়া উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার মো. মনোয়ার হোসেনকে তদন্ত কমিটিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে ২৪/১১/২০১৩ তারিখে সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এ এইচ এম এ ছালেককে তদন্ত কমিটির প্রতিনিধি হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে ২১/১০/২০১৪ তারিখে সরকারি আজিজুল হক কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এ বি এম মিশামুল হাবীব (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি) ও পর্যায়ক্রমে কমিটি পরিবর্তন করে ডিজির প্রতিনিধি সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. হুমায়ুন কবির মজুমদার ও বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আবদুল মজিদকে পুনরায় তদন্ত কমিটির মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু ৭-৮ বছর অতিবাহিত হলেও অজ্ঞাত কারণে তদন্ত কমিটির কেউই কোনো রিপোর্ট অদ্যাবধি পেশ করেন নাই। এদিকে দ্বিতীয়বার আমেরিকা থেকে ফিরে অধ্যক্ষ রোকসানা খানম তার উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের সনদপত্র গভর্নিং বডির কাছে শিগগিরই জমাদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ০৫/১১/২০১৭ তারিখে কলেজে যোগদান করেন। কিন্তু সনদপত্র জমা দেব, দিচ্ছি বলে বলে এবং নানা রকম অজুহাত দেখিয়ে তিনি কালক্ষেপণ করতে থাকেন এবং পরে স্থানীয় সংসদ সদস্যকে ম্যানেজ করে তাকে দিয়ে গভর্নিং বডির সভাপতিকে চাপ প্রয়োগ করে স্বপদে বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। কলেজের একাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা অভিযোগে জানান, উচ্চ শিক্ষার্থে নয়, ডিভি পেয়ে ৫ বছর ২৭ দিন আমেরিকায় অবস্থান করেন অধ্যক্ষ রোকসানা খানম। এ সময় তিনি অনৈতিকভাবে সরকারি কোষাগার থেকে বেতনভাতা উত্তোলন করেছেন। যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৯৪ সালে উচ্চশিক্ষা লাভের ছুটি বিধি (ক) (খ) ও (গ) ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১০ সালের ছুটিবিধি (ক) (খ) ও (গ) লঙ্ঘন করেছেন। তথ্য গোপন করে সরকারি বেতন-ভাতা উত্তোলন করেছেন- মর্মে দুদকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন কলেজ গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি এস এম শাহাবুদ্দিন টুটুল। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শাহাবুদ্দিন টুটুল বলেন, আমেরিকার ডিভি পেলেও তিনি তথ্য গোপন করে উচ্চশিক্ষার নাটক সাজিয়ে আমার পূর্বে দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতির কাছ থেকে অনৈতিক উপায়ে ছুটি নিয়ে ৫ বছর আমেরিকায় অবস্থান করেছেন, নীতিমালা উপেক্ষা করে ব্যাংক লেনদেন সম্পন্ন করছেন। কলেজের নীতিমালায় সভাপতি ও অধ্যক্ষ দ্বারা ব্যাংকের আর্থিক লেনদেন পরিচালিত হওয়ার নিয়ম উপেক্ষা করে অধ্যক্ষ রোকসানা খানম গভর্নিং বডির আরো দুই সদস্যের স্বাক্ষর দিয়ে ব্যাংক থেকে বেতন উত্তোলন করেছেন। আমেরিকায় অবস্থান করেও কার স্বাক্ষরে এমপিওর অর্থ ব্যাংক হিসাবে জমা হলো- এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংক, বেড়া শাখায় খোঁজ নিতে গেলে জানা যায়, অধ্যক্ষ রোকসানা খানমের বেতন মাসে মাসেই উত্তোলন হয়েছে। সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ করতে ওই কলেজে গেলে অধ্যক্ষর পক্ষে শিক্ষক-কর্মচারীরা সাংবাদিককে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করে। এ সময় ছবি তুলতে বাধা প্রদান করেন। এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ রোকসানা খানম ডিভি লটারিতে আমেরিকায় যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি যেহেতু আমেরিকা যাওয়ার সুযোগ পেলাম সে কারণে আমার ইচ্ছা হলো উচ্চশিক্ষা অর্জনের। আমি গভর্নিং বডির অনুমতিক্রমেই আমেরিকা গিয়েছিলাম। আমেরিকা থাকাকালীন বেতন উত্তোলন করেছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, কয়েক মাস বেতন উত্তোলন করেছিলাম তারপর গভর্নিং বডি বেতন বন্ধ করে দেয়। পরে আর বেতন উত্তোলন করতে পারিনি। উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য ছুটি নিলেও সেই শিক্ষা সনদ কলেজে জমা দিয়েছেন কি না- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি তো উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে পারিনি তাহলে শিক্ষা সনদ জমা দেব কীভাবে? তবে আমি চেষ্টা করেছিলাম। এ বিষয়ে সাবেক ভারপাপ্ত অধ্যক্ষ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবদুল আলীম বলেন, ‘আমাদের অধ্যক্ষ ডিভি পাওয়ার পরে দুই বছরের শিক্ষা ছুটি নিয়ে আমেরিকা যান। দুই বছর পরে এসে তিনি কোনো শিক্ষা সনদ দেখাতে পারেননি। তৎকালীন গভর্নিং বডির সভাপতি তাকে কলেজে যোগদান করতে দেননি। তখন তিনি আবার ছুটি বাড়ানোর আবেদন করে আবার আমেরিকা চলে যান। কিন্তু গভর্নিং বডি ছুটি বর্ধিত করেনি। তখন গভর্নিং বডির মিটিংয়ের মাধ্যমে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু একাধিক তদন্ত কমিটির কোনো প্রতিবেদন আজ অবদি প্রকাশ হয়নি। কলেজের গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি এস এম শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আমি গভর্নিং বডির সভাপতি হওয়ার পরে জানতে পারি অধ্যক্ষ রোকসানা খানম ২০১১ সালে তৎকালীন সভাপতি আবদুল কাদেরের কাছ থেকে উচ্চশিক্ষা অর্জনের কথা বলে নিজ বেতনে প্রথমে ২ বছরের জন্য ছুটি নিয়ে আমেরিকায় যান। ছুটির মেয়াদ পার হলে তিনি ছুটি বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তখন আমি গভর্নিং বডির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলাম। আমি অধ্যক্ষকে উচ্চশিক্ষা অর্জনের প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি সাবমিট করতে বলি কিন্তু তিনি তা দেখাতে ব্যর্থ হন। পরে জানতে পারি, তিনি প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার জন্য নয় বরং ডিভি লটারি পেয়ে আমেরিকায় অবস্থান করেন এবং পুরোপুরি অবৈধ ছুটি নিয়ে প্রথমে দুই বছর ও উপযুক্ত কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়ে পরবর্তীতে ছুটি ছাড়াই আরো তিন বছর, মোট ৫ বছর আমেরিকায় বসবাস করেন। ওই ৫ বছর বসবাসকালে তিনি কৌশলে বেতন-ভাতাও উত্তোলন করেছেন। বিষয়টি নিয়ে আমি সভাপতি হিসেবে বাধা দিলে অধ্যক্ষ স্থানীয় সংসদ সদস্যকে ম্যানেজ করে আমাকে সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে অন্যদের বিভিন্ন সময়ে গভর্নিং বডিতে নিয়ে এসে তার অবৈধ কর্মকাণ্ডগুলো বৈধ করে নিয়েছেন। আমি চাই বিষয়টির একটি সুষ্ঠু তদন্ত হোক।’ এ ব্যাপারে বেড়া উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা মো. খবির উদ্দিন বলেন, ‘কাশীনাথপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রোকসানা খানমের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের কপি পেয়েছি। ইউএনওর নির্দেশনায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহা. সবুর আলী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার জানা ছিল না। অভিযোগের কপি পেয়েছি তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Advertisement (sandha)
A
dvertisement (pabna sweet)
Advertisement (school)

No comments