দোয়া চেয়ে বিলবোর্ড টাঙিয়ে ভাইরাল পাঁচ শিক্ষার্থী
পরীক্ষার জন্য দোয়া চেয়ে বিলবোর্ড টাঙিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছেন পাবনার পাঁচ শিক্ষার্থী। তাদের এই কাজকে কেউ কেউ নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখলেও অনেকেই আবার সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই দেখছেন।
ওই পাঁচ শিক্ষার্থী হলো- পাবনার বেড়া উপজেলার জাতসাকিনী ইউনিয়নের কাবাসকান্দা গ্রামের ইফতেখার উদ্দিন আহমেদের ছেলে সুহায়িব আহমেদ সাহেদ, একই গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে অমিত হাসান রাফিদ, একই ইউনিয়নের নয়াবাড়ি গ্রামের মোহন মোল্লার ছেলে নাহিদ হাসান, আহম্মেদপুর ইউনিয়নের দ্বারিয়াপুর গ্রামের খন্দকার শহিদুল্লার ছেলে সামি খন্দকার ও একই গ্রামের খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মামুনের ছেলে খন্দকার মাশরাফি।
তারা বেড়ার কাশিনাথপুর মোড়ে অবস্থিত কাশিনাথপুর বিজ্ঞান স্কুলের শিক্ষার্থী। সবাই স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। তারা সপ্তম শ্রেণি থেকে এই স্কুলে পড়াশোনা করছে। আগামী ১৯ জুন থেকে তাদের এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। নিজেদের আলাদাভাবে তুলে ধরতে এসএসসি পরীক্ষার জন্য দোয়া চেয়ে নিজেদের নাম দিয়ে বিলবোর্ড টাঙিয়েছিল এই পাঁচ শিক্ষার্থী। এরপরই এটি ভাইরাল হয়ে যায়।
শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান বলে, এমন কিছু করার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। আমরা গত ৪ জুন একটা প্রেসের সামনে দাঁড়িয়ে পাঁচ বন্ধু কথা বলছিলাম। সেখানে একটি ডিজিটাল বিলবোর্ড দেখে মাথায় আসে সেরকম একটা বিলবোর্ড আমরা বানাতে পারি কি না। তখন নিজেরাই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিই বিলবোর্ড বানানোর।
শিক্ষার্থী অমিত হাসান রাফিদ বলেন, যেহেতু আমরা রাজনীতি করি না তাই কী উদ্দেশ্যে বিলবোর্ড বানানো যায় সেই চিন্তা করি। তখন আমাদের মাথায় এল, এবার আমরা এসএসসি পরীক্ষার্থী। সবার কাছে দোয়া চেয়ে আমরা একটা বিলবোর্ড বানাতে পারি। সেই চিন্তা থেকে মূলত আমরা ডিজিটাল বিলবোর্ড বানাই।
সুহায়িব আহমেদ সাহেদ বলেন, ৪ জুন আলোচনার পর স্থানীয় সবুজ ডিজিটাল প্রেসে তিনটা বিলবোর্ড বানাতে দেই। খরচ হয় এক হাজার টাকা। পরের দিন কাশিনাথপুর মোড়ে পুলিশ বক্সের পাশে, ফুলবাগান চত্বরে ও বিজ্ঞান স্কুলের সামনে তিন জায়গায় তিনটা বিলবোর্ড টাঙিয়ে দেই। আমরা কেউ ফেসবুকে বিলবোর্ডের কোনো ছবি পোস্ট করিনি।কাশিনাথপুর মোড়ে পুলিশ বক্সের পাশে টাঙানো বিলবোর্ডের ছবি কেউ একজন ফেসবুকে শেয়ার করলে ভাইরাল হওয়ার পর আমাদের নজরে আসে।
খন্দকার মাশরাফি বলেন, আমরা ভাইরাল হওয়ার জন্য এটা করিনি। ভাবিনি যে এমন একটা বিষয় ভাইরাল হবে। আমরা শুধু নিজেদের এসএসসি পরীক্ষার জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছি। ফেসবুকে বিষয়টি ভাইরাল হওয়ায় অনেক নেতিবাচক মন্তব্য দেখে গত ৭ জুন বিলবোর্ডগুলো নামিয়ে ফেলি। এ কাজে আমাদের কেউ নিষেধ করেনি। আমাদের বিলবোর্ড করার বিষয়টি পরিবার বা শিক্ষকরা কেউ জানতেন না।
সামি খন্দকার বলেন, দীর্ঘ দিন করোনার কারণে পূর্ববর্তী ব্যাচের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারেনি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় আমরা পরীক্ষা দিতে পারছি। এতে আমরা আনন্দিত। আমাদের প্রস্তুতিও ভালো। কিন্তু ফলাফল অনেকটা ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে। তাই আমরা পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের পাশাপাশি এলাকাবাসীর দোয়া নেওয়ার জন্য এই বিলবোর্ড বানিয়েছিলাম। এটা যে ভাইরাল হবে সেটা ভাবিনি। তবে অনেক ইতিবাচক মন্তব্য দেখে কাছে মনে হয়েছে, আমরা ভুল কিছু করিনি। আমরা তো খারাপ কোনো কাজ করিনি।
কাশিনাথপুর বিজ্ঞান স্কুলের প্রধান শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের স্কুলের পাঁচজন ছাত্র অভিনব কায়দায় দোয়া চেয়েছে। এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা আমাদের নজরে আসে। স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা এ কাজটি করেনি। তারপরও আমরা এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখি। কারণ তারা তো কোনো অপরাধ করেনি। তারা দোয়া চেয়েছে মাত্র। দোয়া তারা বিভিন্নভাবে চাইতে পারে।
স্কুল পরিচালনা পরিষদের সভাপতি আমিরুল ইসলাম সানু বলেন, আসলে ওরা বিষয়টি না বুঝে করেছে। ফেসবুকে অনেকে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। আবার অনেকেই এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষ অনভিজ্ঞতার কারণে কিছুটা বিব্রতও হয়েছি। তবে তারা অন্যায় কিছু করেনি বলে মনে করি। এটিকে আমরা সৃজনশলীতার দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখতে চাই।
Advertisement (sandha)
Advertisement (pabna sweet)
Advertisement (school)
No comments