× প্রচ্ছদ ঈশ্বরদী পাবনা জাতীয় রাজনীতি আন্তর্জাতিক শিক্ষাজ্ঞন বিনোদন খেলাধূলা বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নির্বাচন কলাম
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ঈশ্বরদী খেলা প্রযুক্তি বিনোদন শিক্ষা



ঈশ্বরদীতে বিগত বছরের আলোচিত হত্যাকান্ড

ঈশ্বরদীতে হঠাৎ করেই বেড়েছে হত্যাকান্ড। গত বছরের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে এই উপজেলাতে। বৃদ্ধা, গৃহবধূ, ছাত্র, যুবক থেকে শুরু করে তালিকায় রয়েছে ভিক্ষুকও। এ হত্যাকান্ডগুলো ঈশ্বরদীবাসীকে হতবিহবল করলেও পুলিশ বলছে একে-অপরের সম্পর্কিত ব্যক্তির দ্বারা হত্যাকান্ডগুলো সংঘটিত হয়েছে। যা পুলিশের পক্ষে আগে জানা বা বোঝা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। প্রত্যেকটি হত্যাকান্ডের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আসামী গ্রেপ্তার রয়েছে, তদন্তে অগ্রগতিও রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছেন। গত বছরের ৩১ মার্চের ঘটনা। আনোয়ারা খাতুন নামে ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। ঘটনাস্থল পাবনার ঈশ্বরদী শহরের পশ্চিমটেংরি চারা বটতলা এলাকা। ভারসাম্যহীন স্বামীকে নিয়ে একাই বাড়িতে থাকতেন। ছেলে-মেয়েরা বাড়িতে থাকতেন না। ৩০ মার্চ দিবাগত রাতে বা ভোরের কোনো এক সময় বাড়িতে ঢুকে বৃদ্ধাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ঈশ্বরদী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ একজনকে আটক করে। এ ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিআইবি) তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে বলে থানা সুত্রে জানা গেছে। বৃদ্ধা হত্যাকান্ডের ঠিক এক মাস পর (৩০ এপ্রিল) দিনে-দুপুরে শহরের মশুরিয়া পাড়ায় বাড়িতে এসে পরিকল্পিতভাবে মুক্তি খাতুন রিতা (২৭) নামে গৃহবধূকে গলাকেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত চার জনের মধ্যে তিনজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। একজন পলাতক রয়েছেন। টাকা দিয়ে চাকুরি না পাওয়ায় এই হত্যাকান্ড বলে গ্রেপ্তার তিন জনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়ে হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। প্রেম আর জমির ভাগাভাগি নিয়ে দ্ব›েদ্ধর কারণে শাকিল আহমেদ নামে ব্যবসায়ীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের সামনে এক ভাড়া বাসা থেকে ২৮ মে রাতে শাকিলের মৃতদেহ উদ্ধার করে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ। ‘শাকিল ক্লথ ষ্টোর’ নামে ঈশ্বরদী বাজারে তাঁর একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। এ ঘটনায় শাকিলের স্ত্রী মিম খাতুন ও আপন ছোট ভাই সাব্বির আহমেদকে পুলিশ আটক করে। পরে হত্যারকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা আদালতে জবানবন্দিতে স্বীকার করেন তাঁরা। ৩০ মে শাকিলের মামা কোরবানী আলী বাদী হয়ে ঈশ্বরদী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের সাতদিনের মাথায় পুলিশ এই হত্যাকান্ডের কারণ উদঘাটন করে। পাবনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করে উদঘাটিত হত্যার রহস্য সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানান। শাকিল আহমেদের স্ত্রী মিম খাতুন ও তাঁর ছোট ভাই সাব্বির আহমেদকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা কারাগারে রয়েছেন এবং এ মামলার চার্জসিট আদালতে দাখিল করা হয়েছে বলে পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। শাকিল আহমেদ হত্যাকান্ডের পর পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় ভিক্ষুক মিলন হোসেন চাপাকে। এই হত্যাকান্ডেরও রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ। পাওনা টাকা দিতে কালক্ষেপন এবং বাগবিতন্ডার পর এই হত্যাকান্ড বলে তদেন্তর পর জানতে পারে পুলিশ। ২৪ জুন পরিকল্পনা অনুযায়ী ভিক্ষুক মিলন হোসেনকে গলাটিপে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে বেøড কেটে ক্ষত-বিক্ষত করে এবং বিদ্যুৎস্পর্শ করে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের পর জড়িত চারজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাঁরা হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। ২৮ জুন দুপুরে পাবনার পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ মহিবুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করে হত্যা রহস্য উদঘাটনের তথ্য জানায় সাংবাদিকদের। মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এরপর ১১ আগস্ট পৌর এলাকার সাঁড়া গোপালপুর এলাকায় শ্বশুর বাড়ি থেকে ১৮ বছর বয়সী মেঘলা খাতুন নামে এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ঈশ্বরদী থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ঘটনার পরপরই গৃহবধূর বাবা হাফিজুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়ে মেঘলাকে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে। সে আত্মহত্যা করতে পারে না। মামলায় শ্বাশুড়িকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি কারাগারে রয়েছেন। গৃহবধূ মেঘলার স্বামী পলাতক রয়েছে বলে পুলিশ জানায়। মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে বলেও পুলিশ জানিয়েছে। এখানেই শেষ নয়, মাদক সেবনে বাধা দেওয়ায় বিপ্লব ফকির নামে যুবককে হত্যা করা হয়। ২ অক্টোবর রাতে ফোনে ডেকে নিয়ে পাকশীর চররুপপুর জিগাতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদে বেঁধে রেখে নির্মমভাবে নির্যাতন চালিয়ে বিপ্লবকে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় ঈশ্বরদী থানায় মামলা দায়ের করা হয়। দুইজনকে এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়। বাকীরা পলাতক রয়েছেন। তদন্ত চলছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা। ১০ ডিসেম্বর অপহরণের চার দিন পর কলেজ ছাত্র রাইমুল ইসলাম হৃদয়ের (২২) ১০ টুকরো লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৩ ডিসেম্বর রাত ৯টার দিকে উপজেলার দাশুড়িয়ার নওদাপাড়া গ্রামে চাঁদ আলী নামের ব্যক্তির বাড়ির ঘরের মেঝে খুড়ে হৃদয়ের লাশের টুকরো টুকরো অংশ উদ্ধার করা হয়। বাড়িতে থাকা হোসেন আলীকে আটক করে পুলিশ। হৃদয় পাকশীর নতুন রূপপুর এলাকার মজনু মোল্লার ছেলে। সে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের মাষ্টার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল। পাওনা টাকা না পাওয়ায় হৃদয়কে হত্যা করেছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে হোসেন আলী। সে পাবনা কারাগারে রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। সর্বশেষ ২১ ডিসেম্বর সকালে দাশুড়িয়ায় এক অন্ত:স্বত্বা গৃহবধূকে ধারালো রামদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২১ ডিসেম্বর সকালে শারমীন শিলা (৩২) নামে গৃহবধূকে কুপিয়ে হত্যা করে সুমন আলী নামে এক যুবক। এ ঘটনায় আহত হন গৃহবধূর স্বামী রানাউর রহমান। ঘটনার পরপর হামলাকারীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে এলাকাবাসী। উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের মুনশিদপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আটক সুমন আলী (৩০) একই উপজেলার সরাইকান্দি গ্রামের আজগর আলীর ছেলে। পুলিশ জানায়, আটক সুমন আলী এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পূর্ব কোনো শক্রুতার কারণে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। সদ্য বিদায়ী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ঈশ্বরদী সার্কেল) ফিরোজ কবীর আট হত্যাকান্ডের বিষয়ে বলেন, এসব হত্যাকান্ডে আইনশৃঙ্খলার অবনতি এটা কোনোভাবেই বলা যাবে না। তিনি বলেন, চারা বটতলার বৃদ্ধা আনোয়ারা খাতুন ছাড়া সবগুলো হত্যাকান্ডই মূলত ব্যক্তিগত সম্পর্ক কেন্দ্রীক। পরকীয়া, জমি ভাগাভাগি, টাকা লেনদেন থেকে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় হত্যাকান্ডগুলো সংঘটিত হয়েছে। এ বিষয়গুলো সম্পর্কে আগাম তথ্য পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে ঘটনার পরপরই পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। কারণ উদঘাটনসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করেছে। অধিকাংশ মামলার প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ঈশ্বরদীর সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের যেকোনো সময়ের চাইতে অনেক ভালো রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে পুলিশি তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। Advertisement (madimart)
Advertisement (sandha)
A
dvertisement (pabna sweet)
Advertisement (school)

No comments