× প্রচ্ছদ ঈশ্বরদী পাবনা জাতীয় রাজনীতি আন্তর্জাতিক শিক্ষাজ্ঞন বিনোদন খেলাধূলা বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নির্বাচন কলাম
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ঈশ্বরদী খেলা প্রযুক্তি বিনোদন শিক্ষা



বিয়ে না করে একত্রে বসবাস অতপর খুন!

রাজধানীর গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী ঈগল পরিবহনের একটি বাসের বাক্সে রাখা ট্রাঙ্কে অজ্ঞাতনামা এক তরুণীর লাশ পাওয়া যায় প্রায় ৬ বছর আগে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর থানা পুলিশ ও সিআইডির তদন্তে চলে যায় চার বছর। কিন্তু রহস্যের কূল-কিনারা হয়নি। পরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলার তদন্ত ভার দেন আদালত। অবশেষে ওই তরুণীর লাশের পরিচয় শনাক্তসহ মূল আসামিকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। পুলিশের বিশেষ সংস্থাটির তদন্তে ওঠে এসেছে হত্যাকান্ডের চাঞ্চল্যকর তথ্য। এ ঘটনায় ভিকটিম শম্পা বেগমকে হত্যা করে কৌশলে লাশ বাসে তুলে দেন তার প্রেমিক নৌ বাহিনী সদস্য রেজাউল করিম স্বপন (পরবর্তীতে বাধ্যতামূলক অবসরপ্রাপ্ত)। এর আগে তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে চট্টগ্রামে সাবলেট বাসায় থেকেছেন। শনিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সে এক ব্রিফংয়ে এসব তথ্য জানান পিবিআই ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম (বার)। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এসপি (প্রশাসন), মো. ইকবাল ও পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) ইউনিট ইনচার্জ মো. জাহাঙ্গীর আলম। মামলার তদন্তের তথ্য দিয়ে পিবিআই ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার জানান, ২০১৩ সালে খুলনা তিতুমীর নৌঘাঁটিতে কর্মরত নৌ বাহিনী সদস্য রেজাউল করিম স্বপনের সঙ্গে ভিকটিম শম্পা বেগমের পরিচয় হয় খুলনার একটি হাসপাতালে। সেই হাসপাতালে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে কাজ করতের শম্পা। পরিচয়ের সূত্রে রেজাউল-শম্পার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে শম্পা তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে রেজাউল বদলী হয়ে চট্টগ্রামে চলে আসে। এরপর ভিকটিম শম্পাও চট্টগ্রামে চলে আসে। চট্টগ্রামে শম্পার এক ফুফুর বাসায় কিছুদিন থাকে তারা। এরপর ফয়েজ লেক এলাকায় একটি হোটেলে কিছুদিন অবস্থান করে। পরবর্তীতে পাহাড়তলী থানাধীন উত্তর গ্রিনভিউ আবাসিক এলাকায় অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আনোয়ার হোসেনের টিনশেড বাড়ির একটি বাসায় সাবলেট নিয়ে বসবাস শুরু করে। এভাবে তারা ২০১৫ সালের মে মাস পর্যন্ত স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে একত্রে বসবাস করে। আসলে তারা বিয়ে করেনি। ‘‘পরবর্তীতে তাদের মধ্যে এসব বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য দেখা দিলে আসামি রেজাউল করিম স্বপন শম্পাকে ২০১৫ সালের ২ মার্চ গভীর রাতে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। আসামি লাশ গোপন করার উদ্দেশ্যে একটি ট্রাঙ্কে ভর্তি করে ঢাকাগামী ঈগল পরিবহনের একটি বাসে তুলে দেয় এবং সুচতুরভাবে ভিকটিমের বাবাকে জানায়, শম্পাকে খুলনার বাসে তুলে দেওয়া হয়েছে।’’ জানান পিবিআই ডিআইজি। তিনি বলেন, ভিকটিম তার বাবার বাড়িতে না পৌঁছলে তারা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ভিকটিমের ভগ্নিপতি আব্দুল মান্নান পাহাড়তলী থানায় বর্ণিত নিখোঁজ জিডিটি করেন। ভিকটিমের বাবা পরবর্তীতে (২০১৫ সালের ২৭ মার্চ) রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে নৌবাহিনী চট্টগ্রাম অফিসে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। গোপন তদন্তের ভিত্তিতে জানা যায়, উক্ত আসামীকে তার বাহিনী কর্তৃক তদন্তে বিভিন্ন অপরাধ সংশ্লিষ্টতার কারণে ২০১৯ সালে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করা হয়েছে। মামলাটি রুজু হওয়ার পরে দারুসসালাম থানা পুলিশ প্রায় ৩ মাস তদন্ত করে। এরপর পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশে সিআইডি প্রায় ৪ বছর তদন্ত করে লাশ সনাক্ত করতে না পারায় চূড়ান্ত রিপোর্ট সত্য আদালতে দাখিল করলে আদালত মামলাটি লোমহর্ষক ও চাঞ্চল্যকর হওয়ায় রহস্য উদঘাটনের স্বার্থে তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। পিবিআই ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে। এরপর পিবিআইয়ের একটি চৌকসদল নিরলসভাবে পরিশ্রম করে ভিকটিমের পরিচয় শনাক্ত ও মূল আসামী রেজাউল করিম স্বপনকে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ভোরে কুমিল্লা জেলার ইপিজেড এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। আসামী রেজাউল ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারার জবানবন্দি দিয়েছে। পিবিআই জানায়, ২০১৫ সালের ৩ মার্চ সকাল ৯টার দিকে চট্টগ্রাম এ কে খান মোড়ে ঈগল পরিবহনের কাউন্টারে টিকেট কেটে এক ব্যক্তি একটি ট্রাঙ্ক তুলে দেয় বাসের বক্সে। বাসের হেলপারকে বলে সামনের ভাটিয়ারী কাউন্টার থেকে উক্ত টিকেটের যাত্রী উঠবে। কিন্তু পরবর্তী কাউন্টারে বর্ণিত যাত্রী না ওঠায় বাসটি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করে এবং বিকেল পৌনে ৬টা নাগাদ গাবতলীতে পৌঁছায়। শেষ গন্তব্যে সকল যাত্রী যে যার মতো তাদের জিনিসপত্র নিয়ে নেমে যায়। বাসের ড্রাইভার-হেলপার মিলে ট্রাঙ্কটি নামিয়ে দেখে এটি খুব ভারী। তাদের সন্দেহ হওয়ায় দারুসসালাম থানায় খবর দিলে পুলিশ হাজির হয়ে ট্রাঙ্কটি খুলে অজ্ঞাতনামা তরুনীর লাশ দেখতে পায়। এরপর লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে পোস্টমর্টেম এর জন্য হাসপাতালে পাঠায়। পরিচিতি শনাক্ত না হওয়ায় অজ্ঞাত পরিচয় লাশ হিসেবে দাফন করা হয়। কেউ বাদী না হওয়ায় থানা পুলিশের পক্ষে এসআই জাহানুর আলী বাদী হয়ে আসামি অজ্ঞাত উল্লেখ করে দারুস সালাম থানার মামলা একটি মামলা করেন। মামলাটি রুজু হওয়ার পর থেকে শুরুতে প্রায় তিন মাস থানা পুলিশ তদন্ত করে। থানা পুলিশের পরে সিআইডি দীর্ঘ চার বছর তদন্ত করে। কিন্তু লাশের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় এবং হত্যা রহস্য উন্মোচিত না হওয়ায় আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে। দাখিলকৃত রিপোর্ট গ্রহণ না করে আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে দিলে পিবিআই ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম (বার), পিপিএমের নির্দেশে পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) উক্ত মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে। পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) এর ইউনিট ইনচার্জ মো. জাহাঙ্গীর আলম, বিশেষ পুলিশ সুপারের তত্ত্বাবধানে তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ইন্সপেক্টর আশরাফুজ্জামান ভিকটিমকে শনাক্ত করার জন্য প্রচলিত সকল পদ্ধতি প্রয়োগ করে। পরবর্তীতে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে স্ব-শরীরে চট্টগ্রাম মেট্রো এবং জেলা এলাকার সকল থানায় বিগত ২০১৫ সালে এন্ট্রিকৃত নিখোঁজ জিডিসমূহ অনুসন্ধান করে তথ্য নিয়ে আসার জন্য পাঠানো হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা কাছাকাছি সময়ের প্রায় দশ বারোটি নিখোঁজ জিডির তথ্য উদঘাটন করেন। জিডিগুলোর মধ্যে জিডি নং-৫৯৯ তারিখ ১০/০৬/২০১৫ ইং মূলে দেখা যায়- শম্পা বেগম, পিতা ইলিয়াস শেখ, গ্রাম: দেওয়ানা উত্তরপাড়া, থানা: দৌলতপুর, খুলনা উক্ত তারিখে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানা এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। উক্ত ঘটনা সংক্রান্তে ভিকটিম শম্পা বেগমের ভগ্নিপতি আব্দুল মান্নান ১০/০৬/২০১৫ তারিখে পাহাড়তলী থানায় উক্ত জিডিটি করেন। উক্ত জিডির সূত্র ধরে তদন্তকারী কর্মকর্তা জিডি রুজুকারী ভিকটিমের ভগ্নিপতি জনাব আব্দুল মান্নান এবং ভিকটিম শম্পা বেগমের বাবা জনাব ইলিয়াস শেখ (অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য) এর সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, ২০১৩ সালে জনৈক রেজাউল করিম স্বপন (অবসরপ্রাপ্ত নৌ বাহিনী সদস্য) খুলনা তিতুমীর নৌঘাঁটিতে কর্মরত থাকাকালীন ভিকটিম শম্পা বেগম হাসপাতালে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টের কাজ করতেন।ADVERTISEMENT (rafiqul)
Advertisement (madimart)
Advertisement (sandha)
Advertisement (pabna sweet)
Advertisement (school)

No comments