আওয়ামী লীগের এক ডজন পরিকল্পনা সামনে
প্রায় এক বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘কার্যনির্বাহী সংসদের’ সভা। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে প্রায় এক ডজন পরিকল্পনা সামনে নিয়ে এ সভায় বসতে যাচ্ছে দলটি। গুরুত্বপূর্ণ এ সভা থেকে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের এ বৈঠক সামনে নিয়ে মোটা দাগে পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- দলে সাংগঠনিক স্থবিরতা কাটিয়ে নেতাকর্মীদের সক্রিয় রাজনীতিমুখী করা, জেলার অসমাপ্ত সম্মেলনগুলোর কাজ করা, জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতি, নির্বাচন কমিশন গঠন, দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ মেটানো, সুষ্ঠুভাবে স্থানীয় নির্বাচন সম্পন্ন করা, সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি পুনর্গঠন করা, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন মোকাবিলা, মহানগর আওয়ামী লীগ পুনর্গঠন করা, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোসহ সমসাময়িক ইস্যু।
করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় বেশ কয়েক মাস দল গোছানোর কাজ বন্ধ রাখে আওয়ামী লীগ। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় এ মাসের শেষদিকে সাংগঠনিক সফর শুরু হবে। দল গোছাতে ইতোমধ্যে আটটি টিম করা হয়েছে। এর আগেই আগামী ৯ সেপ্টেম্বর দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা হওয়ার কথা। যদিও এখনো দল থেকে কোনো চূড়ান্ত বার্তা দেওয়া হয়নি।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হতে পারে- এমন ইঙ্গিত থেকেই যে কোনো পরিস্থিতি রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার জন্য দলের ভিত শক্তিশালী করতে চায় আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পৌরসভা, ইউনিয়নের নির্বাচন, অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন, বিরোধী দল বিএনপিকে মাঠে না নামতে দেওয়ার রাজনৈতিক কর্মসূচিসহ দলের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন নিয়ে সভায় আলোচনা হবে।
জানা গেছে, ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ সব জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন সম্মেলন করে কমিটি দেওয়া হবে। এ ছাড়াও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ইউনিট কমিটি গঠন শুরু হয়েছে। এসব কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে ২০২২ সালের পুরোটাই লেগে যেতে পারে।
এদিকে সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগেই কুমিল্লা-৭ উপনির্বাচনের প্রার্থী ঠিক করতে তিনি মনোনয়ন বোর্ডের সঙ্গে বৈঠক করবেন। একই সঙ্গে পৌরসভা ও ইউনিয়নে প্রার্থী বাছাইয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা হবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, করোনার কারণে আমরা সাংগঠনিক তৎপরতা চালাতে পারিনি। দীর্ঘদিন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি উন্নয়নের দিকে যাওয়ায় আবারও সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারে কর্মপন্থা ঠিক করছি। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা রয়েছে। জেলার অসমাপ্ত সম্মেলনগুলো শেষ করা হবে এবং নির্ধারিত সময়েই জাতীয় সম্মেলন করার পরিকল্পনা নিয়েই আমরা এগোচ্ছি। এটা আস্তে আস্তে দৃশ্যমান হবে। কীভাবে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করা যায়, নেত্রী (শেখ হাসিনা) সভা থেকে সেই নির্দেশনা দেবেন। তা আমরা বাস্তবায়ন করব।
আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, সভায় সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয় আলোচনা হবে। এর মধ্যে দলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি, সম্মেলনের পর কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়া, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিও মাঠে নামতে চায়। এ বিষয়ে দলীয় কর্মসূচি কী হবে- এসব বিষয় আলোচনায় প্রাধান্য থাকবে। তিনি আরও বলেন, বৈঠকে দলের সাংগঠনিক কাজের গতি বৃদ্ধি ও দলকে শক্তিশালী করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন নেত্রী।
Advertisement
দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জানান, আট বিভাগে আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৪৩টি এখনো মেয়াদোত্তীর্ণ। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১৫টি, চট্টগ্রামের সাতটি, ময়মনসিংহের পাঁচটি, রাজশাহীর চারটি, বরিশালের চারটি, রংপুরের তিনটি, খুলনার চারটি এবং সিলেট বিভাগের একটি সংগঠনিক জেলা মেয়াদোত্তীর্ণ।
অন্যদিকে সারা দেশে আওয়ামী লীগের উপজেলা, থানা ও পৌর কমিটির সংখ্যা প্রায় ৬৫০ মতো। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৬০টি, চট্টগ্রামে ১২৯টি, রাজশাহীতে ৮৩টি, খুলনায় ৭৪টি, রংপুরে ৬৬টি, বরিশালে ৫৩টি, সিলেটে ৪৯টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৯টির মতো কমিটি রয়েছে। জাতীয় সম্মেলনের আগে ১৩৮টির মতো উপজেলা, থানা ও পৌরসভা কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের পরও বেশকিছু উপজেলা, থানা ও পৌরসভা কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তবে ৬৫০টি কমিটির মধ্যে এখনো ৩৫০টির অধিক মেয়াদোত্তীর্ণ। এছাড়া সম্মেলন হওয়া কমিটির অর্ধেকেরও বেশি পূর্ণাঙ্গ হয়নি।
Advertisement
গত বছরের ৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সর্বশেষ বৈঠক সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠিত হয়। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সভায় ৩৩ জনকে ডাকা হয়। তাদের করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ ফল আসার পরই সভায় যোগদানের অনুমতি দেওয়া হয়। এবারও একই পদ্ধতিতে সভা হবে।
No comments