× প্রচ্ছদ ঈশ্বরদী পাবনা জাতীয় রাজনীতি আন্তর্জাতিক শিক্ষাজ্ঞন বিনোদন খেলাধূলা বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নির্বাচন কলাম
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ঈশ্বরদী খেলা প্রযুক্তি বিনোদন শিক্ষা



ঢিলেঢালা লকডাউনে শিথিল নজরদারি

কঠোর লকডাউনের মধ্যেও প্রতিদিন বাড়ছে রাজধানীর প্রবেশমুখে ঢাকামুখী মানুষ ও যানবাহনের চাপ। আর চেকপোস্টে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছুটা তৎপরতা থাকলেও সাধারণ মানুষের চলাচলে ছিল না কোনো বাধা। আর পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে দোকান খুলেই চলছে বেচাকেনা। এদিকে ‘টিকা নেওয়া ছাড়া ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে কেউ ১০ আগস্টের পর বাইরে বের হতে পারবেন না’ বলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তা তিনি প্রত্যাহার করেছেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। এতে আরো বলা হয়, ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সব নাগরিককেই পর্যায়ক্রমে টিকার আওতায় আনা হবে। গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে এক সভা শেষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ১০ আগস্টের পর থেকে ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের টিকা ছাড়া চলাচল শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।Advertisement
অন্যদিকে, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউনের ১৩তম দিন গতকাল বুধবার রাজধানীর খিলগাঁও, বিশ্বরোড, মিরপুর, মগবাজার, পান্থপথ, ধানমন্ডি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মোড়ে মোড়ে তল্লাশি চৌকিতে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা থাকলেও তেমন কোনো তৎপরতা নেই । পথচারীদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে না। তবে ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটসাইকলে চালকদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা যায়। ব্যবসায়ী মো. রাজু কচুক্ষেত থেকে যাচ্ছিলেন মিরপুর ১২ নম্বরে। পথে ১০ নম্বর গোল চত্বরের চেকপোস্টে তার গতিরোধ করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সেখানে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্য তার মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চান। পরে রাজু বলেন, পুলিশ মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখল। সবকিছু ঠিক ছিল। আমি আমার ভাইকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। আমাকে সতর্ক করে ছেড়ে দিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। এসময় তিনি আরো বলেন, পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলছে তুমুল আড্ডা। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করবে কে? লকডাউনের তৎপরতা শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্টগুলোতে দেখা যায়। আর কোথাও দেখা যায় না। এদিকে ঢাকামুখী মানুষ ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে। পায়ে হেঁটে মানুষজন যেমন প্রবেশ করছে, তেমনি বিভিন্ন যানবাহনেও প্রবেশ করছে মানুষ। কর্মস্থলে যোগ দেওয়া, টিকা নেওয়া, চিকিৎসার জন্য বেশি মানুষ প্রবেশ করছেন।Advertisement
চেকপোস্টেও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। তবে তল্লাশিতে এসেছে শিথিলতা। মানুষজন যেমন ঢাকায় প্রবেশ করছেন, একইরকম ভাবে ঢাকাও ছাড়ছেন অনেকে। মূলত যারা ঢাকার বাইরে চাকরি করেন তারা বেশি ঢাকা ছাড়ছেন। গাবতলী চেকপোস্টে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট বিএম সাদাত হোসেন বলেন, টিকা নেওয়া, ব্যাংকে যাওয়া, গাড়িচালক, গার্মেন্টসে কাজ করেন-এমন মানুষজন বেশি আসছেন। আমরা যাচাই-বাছাই করছি। কেউ যৌক্তিকতা দেখাতে না পারলে মামলা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল রাজধানীর সড়কগুলোয় ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ ছিল গত কয়েকদিনের তুলনায় বেশি। পাড়া-মহল্লার অলিগলিতেও মানুষের আনাগোনা দেখা গেছে। গার্মেন্টস খুলে দেওয়ায় জীবিকার টানে কর্মস্থলে ফিরতে বেশির ভাগ মানুষ ঢাকায় আসছেন এখনো। যানবাহনগুলো চেকপোস্টে তল্লাশি করা হলেও পায়ে হেঁটে মানুষ প্রবেশ করছেন বিনা বাধায়। সরেজমিনে দেখা যায়, এলাকার পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে সব ধরনের দোকানপাট খোলা। চায়ের দোকানগুলোতে আড্ডা চলছে পুরোদমে, মানা হচ্ছে না শারীরিক দূরত্ব। কারণে অকারণে ঘর থেকে বের হচ্ছে মানুষজন। এমন চিত্র দেখে বোঝার উপায় নেই যে, দেশে কঠোর লকডাউন চলছে। এক সপ্তাহ আগেও শাটার অর্ধেক নামিয়ে বেচাকেনা করা হতো যেসব দোকানে, তার পুরোটাই এখন খোলা। বন্ধ রেখে যে দোকানের সামনে বসে থাকতেন কর্মচারীরা, সেখানে এখন স্বাভাবিক সময়ের ব্যস্ততা। ঈদের পর দ্বিতীয় দফার কঠোর লকডাউনের গতকাল বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার অলিগলি ঘুরে বেশিরভাগ দোকানপাটেই এমন চিত্র দেখা গেছে। মিরপুর-১ নম্বর সি ব্লকে রাহিম জেনারেল স্টোরের কর্মচারী মো. লিটন বললেন, এখন কি লকডাউন আছে? পুলিশের গাড়ি মাঝে মাঝে সাইরেন বাজায়। তখন সামনের শাটার বন্ধ করি। পাশেরগুলা খোলাই থাকে। রাস্তায় সিএনজি অটোরিকশা আর বাস কম বলে একটু ফাঁকা লাগছে।Advertisement
মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরে অফিসের গাড়ির জন্য অপেক্ষমাণ কামরুল হাসান বলেন, দেখুন লকডাউন নামে আছে। আপনিই নিজেই দেখছেন, স্কুল বন্ধ আর বাস বন্ধ বলে রাস্তায় লোক কম। লকডাউনে তো আমার অফিস বন্ধ থাকার কথা। হোম অফিস করার কথা। কিন্তু তা কী হচ্ছে? আমাকেতো যেতে হচ্ছে। তাহলে লকডাউনটা কোথায়। করোনাভাইরাস মহামারির দেড় বছরে এখনই সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা পার করছে বাংলাদেশ। ভাইরাসের ডেল্টা ধরনের বিস্তারে নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে আক্রান্ত আর মৃত্যুর। পরিস্থিতি সামাল দিতে গত ১ জুলাই দেশে লকডাউন জারি করা হলেও বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা করে কোরবানির ঈদের সময় ৯ দিন তা শিথিল করা হয়েছিল। ঈদের ছুটির পর ২৩ জুলাই থেকে ফের শুরু করা লকডাউন ‘কোনোভাবে শিথিল করা হবে না’ বলা হলেও শিল্পকারখানা মালিকদের অনুরোধে গত রোববার থেকে রপ্তানিমুখী কারখানা খুলে দেওয়া হয়। তবে কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে করোনাভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে চলমান কঠোর বিধিনিষেধ আরো পাঁচদিন বাড়িয়ে ১০ আগস্ট পর্যন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ ছিল ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত। এখন সেই বিধিনিষেধের সময় ১০ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ১১ আগস্ট থেকে দোকানপাট, অফিস খোলা থাকবে এবং যানবাহন চলবে।

No comments