বিয়ের প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করে প্রেমিক গোপনে বিয়ে করার খবর পেয়ে চিরকুট লিখে এক কিশোরী আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রবিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের তালুকশিমুলবাড়ী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। খরব পেয়ে সন্ধায় ফুলবাড়ী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। কিশোরীর আত্মহত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে তার বাড়িতে মানুষের ঢল নামে। কোনো ক্রমেই কিশোরীর আত্মহত্যা মেনে নিতে পাড়ছেন না এলাকাবাসী। শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো এলাকায়। কান্না থামছে না পরিবার, আত্মীয়-স্বজনের।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের তালুকশিমুলবাড়ী এলাকার মৃত আফাজ উদ্দিনের মেয়ে শিমুলবাড়ী দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মমতা মিতুর (১৬) সাথে একই এলাকার ভ্যান্ডার মকু মিয়ার ছেলে অনার্স পড়ুয়া রাজু মিয়ার (২৩) প্রায় এক বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। দুজনেই দুজনকে ভালোবাসতেন। রাজু ভালোবেসে তার প্রেমিকা মিতুকে একটি দামি স্মার্টফোনও উপহার দেন। এ অবস্থায় গত ৩০ জুলাই মেয়ের বাড়িতে এসে দুজনকে এক ঘরে পেয়ে পরিবারের লোকজন আটক করে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ছেলেকে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে রাজুর পরিবার কিশোরীর সাথে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিলে মিতুর পরিবার ধর্ষণের মামলা করেনি। তবে পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। জামিনে বেরিয়ে এসে বিয়ে করার কথা থাকলেও গত শনিবার গোপনে অন্যত্র বিয়ে করে রাজু। রোববার বিয়েবাড়িতে আত্মীয়-স্বজনদের আপ্যায়নসহ গান বাজিয়ে আনন্দ চলছিল। সেটা শুনতে পেয়ে রোববার বিকেলে ঘরের ভিতর গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করে ওই কিশোরী। মরদেহের পাশে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। Advertisement
চিরকুটে লেখা- "আমি মমতা মিতু ,আমি রাজুকে খুব ভালোবাসি, রাজুর জন্য আত্মহত্যা করলাম। কারণ আমি ও রাজু দুজনেই দুজনকে খুব ভালোবাসতাম। কিন্তু রাজুর মা-বাবা আমাদের সর্ম্পকটা মানতে চান না। তাই রাজুর বিয়ে দিয়েছে। আজ ওর বৌ-ভাত, আমি এটা মানতে পারছিনা। তাই আমি এই পৃথিবী ছাড়লাম। কিন্তু এই শাস্তি আমি একাই ভোগ করছি না। আমি চাই আমাদের এই সর্ম্পকটার মাঝে যারা বাধা ছিল, তারা যেন আইনি শাস্তি পায়। ইতি মিতু।"
মিতুর খালা রুজিনা আক্তার ও মামা মমিনুল ইসলাম বলেন, রাজুর সঙ্গে প্রেমের সর্ম্পক এলাকার সবাই জানে। এমনকি থানা পুলিশও জানেন। রাজুর গত ৩০ জুলাই আমার ভাগনির সাথে দেখা করতে আসে এবং এক ঘরে ছিল। সে সময় তাকে আটক করা হয়। পরে পুলিশ এসে রাজুকে থানায় নিয়ে যান। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিলে আমরা ধর্ষণ মামলা না দিলে পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে মামলা দেওয়া হয়। জামিনে এসে মিতুকে বিয়ে না করেই গতকাল গোপনে অন্য মেয়েকে বিয়ে করেছে প্রতারক রাজু। রাজুর বিয়ের কথা শুনে আজ আমার ভাগনি আত্মহত্যা করেছে। আমরা ভণ্ড ও প্রতারক রাজুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।Advertisement
স্থানীয় রজব আলী কুলু ও আশরাফুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, মেয়েটির বাবা নেই। এই এতিম মেয়েটার সঙ্গে ভণ্ড ও প্রতারক রাজু অবিচার করেছে। মেয়েটার সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছে। এই অসহায় মেয়েটিকে বিয়ে না করে গোপনে অন্য মেয়েকে বিয়ে করায় আজ মেয়েটা ক্ষোভে দুঃখে আত্মহত্যা করেছে। আমরা ভণ্ড ও প্রতারক রাজুর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। Advertisement
স্থানীয় মিলন ও রাজ বলেন, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত রাজু ও তার পরিবার পলাতক রয়েছে। আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে প্রেমিক রাজু মিয়ার ফোন নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করলে মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার মন্তব্য নেওয়া যায়নি।Advertisement
এ প্রসঙ্গে ফুলবাড়ী থানার ওসি (তদন্ত) সারওয়ার পারভেজ বলেন, সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে গিয়ে কিশোরীর মরদেহ থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। অভিযোগের প্রক্রিয়া চলছে। যে চিরকুট পাওয়া গেছে সেটা এক্সপার্ট দিয়ে পরীক্ষা করার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে। এটা তারই লেখা কি-না।
আমাদের সংযোগ টুয়েন্টিফোর ডেস্ক 
No comments