× প্রচ্ছদ ঈশ্বরদী পাবনা জাতীয় রাজনীতি আন্তর্জাতিক শিক্ষাজ্ঞন বিনোদন খেলাধূলা বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নির্বাচন কলাম
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ঈশ্বরদী খেলা প্রযুক্তি বিনোদন শিক্ষা



দেশজুড়ে প্রতারণার ফাঁদ

গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত ক্লিনিকে কর্মী নিয়োগের নামে দেশজুড়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে বেশ কয়েকটি চক্র। বিভিন্ন পত্রিকায় ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় লাখ লাখ টাকা। চক্রটি চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে দুই ধাপে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা নিয়েছে। বিজ্ঞাপন দেওয়ার পরে তারা চাকরি প্রত্যাশীদের ই-মেইলে সিভি পাঠাতে বলে। পরবর্তীতে সেই মেইলে হাজার হাজার সিভি আসে। এসব সিভি পাওয়ার পর তাদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলা হয়। সম্প্রতি এমন প্রতারণার শিকার হয়ে এক ভুক্তভোগী পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) অভিযোগ করেন। ভুক্তভোগীর কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর অনুসন্ধান করে সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্রের একটি পুরো গ্রুপকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে প্রতারণার শিকার হওয়া একজন রয়েছে। প্রতারণার শিকার হয়ে ওই যুবক প্রতারক দলে যোগ দেয়। গতকাল রোববার রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় পিবিআইর অর্গানাইজড ক্রাইম দক্ষিণ বিভাগের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারোয়ার জাহান। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-মো. ফিরোজ, আব্দুল কুদ্দুস, মাঈনুল ইসলাম, বিল্লাল হোসেন, তৌকির আহমেদ ও কফিল উদ্দিন চৌধুরী। এদের মধ্যে ফিরোজ চক্রের মাস্টারমাইন্ড। যেভাবে হতো প্রতারণা : দেশের প্রথম সারির কিছু পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিত প্রতারক চক্রটি। মহাখালীতে স্বাস্থ্য বিভাগের ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমিউনিটি কেন্দ্রের প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা ব্যবহার করত তারা। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কিছু ইমেল এড্রেস দেওয়া থাকত। যেগুলোতে আগ্রহীরা সিভি পাঠাতেন।Advertisement
সিভি পাওয়ার পর চাকরি প্রার্থীকে একটি এসএমএস-এর মাধ্যমে চাকরি হয়েছে বলে কনফারমেশন পাঠানো হতো। এরপর বিকাশের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন বাবদ নেওয়া হতো ১ হাজার ৯৪০ টাকা। টাকা পাঠানোর পর চাকরিপ্রার্থীকে এই প্রতারকচক্র একটি মানিরিসিট, অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার এবং চূড়ান্ত নির্বাচিত ফরম ইমেইলে পাঠাত। তাদের কথামতো চূড়ান্ত নির্বাচিত ফরম পূরণ করে প্রতারকদের দেওয়া ইমেইলে ফিরতি মেইল করতে হতো চাকরি প্রত্যাশীদের। এরপর ডিজিটাল আইডি কার্ড দেওয়া হবে বলে জানায় প্রতারকরা। বিনামূল্যে ল্যাপটপ ও মেডিকেল ইকুইপমেন্ট দেওয়া হবে সেজন্য দ্বিতীয় দফায় আরো ৪ হাজার ৮০ টাকা দাবি করে চক্রটি। আবারো টাকা পাঠানোর পর চাকরিতে যোগদানের জন্য চাকরি প্রত্যাশীরা প্রতারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। এক পর্যায়ে ওই নাম্বারে আর সংযোগ পাওয়া যায় না। ততক্ষণে ভিকটিম বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন। Advertisement
প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার নাম করে অন্তত ৫ হাজার টাকা করে নিয়ে আসছিল এ চক্রটি। পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারোয়ার জাহান বলেন, তারা এ পর্যন্ত কতজনের সঙ্গে প্রতারণা করেছে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য না পাওয়া গেলেও প্রতারকদের দুটি বিকাশ নম্বরে গত তিন মাসে ১২ লাখ টাকা এসেছে, যা থেকে ধারণা করা যায় তারা কত মানুষকে প্রতারিত করেছে। সরকারি কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পত্রিকায় বিজ্ঞাপন শাখার কেউ এই প্রতারণায় জড়িত আছে কি না তা তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান সারোয়ার জাহান। তিনি বলেন, ‘পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছাপানোর আগে ন্যূনতম যাচাই করা প্রয়োজন। তাহলে প্রতারকরা আর সাধারণ মানুষদের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারত না। ভালো পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে মানুষ আশ্বস্ত হয়। বিজ্ঞাপন সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের নাম আমরা পেয়েছি। যেগুলো যাচাই-বাছাই চলছে।’ প্রতারিত থেকে প্রতারক : নাম তার মাঈনুল ইসলাম। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে সরকারি চাকরির আশায় আবেদন করে প্রতারিত হন তিনি। প্রতারণার শিকার হয়ে একপর্যায়ে হাত মেলান প্রতারকদের সঙ্গে। যেভাবে নিজে প্রতারিত হয়েছিলেন, একই কায়দায় অন্যদের সঙ্গে প্রতারণা শুরু করেন। নওগাঁর পত্নীতলার যুবক মাঈনুলের ব্যাপারে এমন তথ্যই দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। Advertisement
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমিউনিটি কেন্দ্র, সুখী পরিবার, মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র, অ্যাপোলো কনজিউমার প্রোডাক্টসহ বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠানে লোভনীয় বেতনে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে এই মাঈনুলসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের অর্গানাইজড ক্রাইম দক্ষিণ বিভাগ। গত শুক্র ও শনিবার অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মোহাম্মদপুর থানায় ফজলুল করিম নামে এক ভুক্তভোগীর মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে অর্গানাইজড ক্রাইম দক্ষিণের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারোয়ার জাহান জানান, মাঈনুল দুই বছর আগে চাকরি নিতে এসে প্রতারণার শিকার হন। এরপর গত জানুয়ারিতে নিজেই প্রতারকদের সঙ্গে যুক্ত হন। প্রতারকরা একাধিক ইমেল এড্রেস ব্যবহার করে সরকারি চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিত। এসব ইমেইলে যারা সিভি পাঠাতেন, সেগুলো মাস্টারমাইন্ড ফিরোজের কাছে দিত মাঈনুল। সে কীভাবে প্রতারিত হয়েছে এবং নিজে কার হাত ধরে এই প্রতারণায় এসেছে তা বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারোয়ার জাহান। Advertisement
পিবিআই জানান, দেশজুড়েই এ ধরনের প্রতারকচক্রের গ্রুপ রয়েছে। যারা এ রকমভাবে চাকরি প্রত্যাশীদের নানাভাবে প্রলোভনের মধ্যে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেয়। গ্রেপ্তারকৃতরা চক্রের একটি গ্রুপ। রিমান্ডে এনে এদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরো গ্রুপের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। পিবিআই আরো জানায়, প্রতারকদের হাত থেকে রক্ষা পেতে নিজেকে সতর্ক হওয়ার বিকল্প নাই। বিজ্ঞাপন দেখলেই যে আবেদন করতে হবে এমনটা না করে সেই প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে ভালোভাবে খোঁজ নিয়ে তারপর আবেদন করার পরামর্শ পুলিশের এ ইউনিটটির। Copy by Bangladesher Khabor

No comments