× প্রচ্ছদ ঈশ্বরদী পাবনা জাতীয় রাজনীতি আন্তর্জাতিক শিক্ষাজ্ঞন বিনোদন খেলাধূলা বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নির্বাচন কলাম
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ঈশ্বরদী খেলা প্রযুক্তি বিনোদন শিক্ষা



তিন ডোজ টিকার সেই ফারুক হাসপাতালে

একসঙ্গে করোনার তিন ডোজ টিকা নিয়েছেন বলে দাবি ফতুল্লার ওমর ফারুকের। এ ঘটনার পরই নিখোঁজ হন তিনি। পরে জানা যায়, ফারুক বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বৃহস্পতিবার হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. নজরুল ইসলাম খান এ তথ্য জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি আরও জানান, ওমর ফারুককে এক ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এদিকে ওই হাসপাতালে ফারুকের ‘মানসিক সুস্থতা’ও পরীক্ষা করা হবে বলে জানা গেছে। গত বুধবার রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ভুঁইগড় এলাকায় ওমর ফারুকের বাসায় গেলে তার স্বজনরা অভিযোগ করেন, এদিন দুপুরে ওমর ফারুককে অপরিচিত লোকজন ডাক্তার পরিচয়ে বাসা থেকে নিয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. নজরুল ইসলাম খান জানান, তিন ডোজ টিকা নেওয়া যুবক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাকে র‍্যাব সদস্যরা হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। তবে তিন ডোজ নয়, ওমর ফারুককে এক ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান হাসপাতাল পরিচালক। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।Advertisement
জানা গেছে, সৌদি-আরবে যাওয়ার আগে করোনার টিকা নিতে গত সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যান নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা ওমর ফারুক। তিনটি বুথ থেকে তিন ডোজ টিকা নেন তিনি। এ খবর জানাজানি হলে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়। এরপর গতকাল বিএসএমএমইউ পরিচালক বলেন, ‘বিএসএমএমইউ’র টিকাদান কেন্দ্রে একদিনেই তিন ডোজ নেওয়া দাবি করা ওমর ফারুককে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।’ সেই রোগী কোথায়- জানতে চাইলে ব্রিগেডিয়ার নজরুল বলেন, ‘আমাদের এখানেই আছেন। আমরা তাকে পর্যবেক্ষণে রেখেছি।’ ওমর ফারুককে আসলেই তিন ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রথমেই নিশ্চিত করছি তিন ডোজ টিকা একই সময়ে একই ব্যক্তিকে দেওয়া হয়নি। তারপরও যেহেতু নিউজ হয়েছে, গতকাল সন্ধ্যার পরে র‌্যাব বোধহয় তার (দাবি করা ব্যক্তি) সন্ধান পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। সকালে আমি এবং ভিসি মহোদয় তার সঙ্গে কথা বললাম। আমাদের ডকুমেন্টস দেখলাম। যেহেতু নিউজ হয়েছে, তাই ভ্যারিফাই করা দরকার। আদৌ হয়েছে কিনা! কিন্তু আমাদের যে সিস্টেম, এটা কোনোভাবেই হওয়ার সুযোগ নেই।’ ‘একই লোককে যদি একাধিকবার ভ্যাকসিন দেওয়া হয়, সে শিক্ষিত বা মূর্খ যা-ই হোক; সে তো বলবে একবার নিয়েছি? এটা তো খাওয়ার বিষয় নয় যে, প্লেট নিয়ে খেয়ে ফেললাম। তারপরও যেহেতু দাবি করা হচ্ছে, আমাদের পক্ষ থেকে যা যা করার করছি। কনফার্ম হলাম, এটা কোনোভাবেই দেওয়া হয়নি। দ্ব্যর্থহীনভাবেই এ কথাটি বলতে চাই’- যোগ করেন তিনি। ব্রিগেডিয়ার নজরুল বলেন, ‘এক ডোজ টিকা নেওয়ার পর কেন সেটা বলেননি- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন, ‘আমি বুঝতে পারিনি’। সে মেন্টালি সাউন্ড কিনা- এটা আমাদের দেখার বিষয় বলে মনে হলো। এজন্য তিনি মানসিকভাবে সুস্থ (সাইক্রিয়েটিক ইভালোয়েশন) কিনা সেটা পরীক্ষা করব। ইতিমধ্যে একটি বোর্ড করা হয়েছে।’Advertisement
তিনি আরও বলেন, ‘ওমর ফারুক ভালো আছেন, আমাদের কাছে আছে ভর্তি আছেন এবং সুস্থ আছেন। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে ছেড়ে দেব। এরপর তিনি তার গন্তব্যে চলে যাবেন।’ ওমর ফারুকের স্বজন ও এলাকাবাসী জানায়, কিছুদিন আগে সৌদি আরবের ভিসা পেয়েছেন ফারুক। প্রবাসী অ্যাপ থেকে অনলাইনে নিবন্ধন করে গত ২৬ জুলাই সকালে পিজি হাসপাতালে টিকা নেওয়ার জন্য যান। সেখানে প্রথমে একটি বুথে ফাইজারের টিকার এক ডোজ দেওয়া হয়। ওমর ফারুক ওই বুথের স্বাস্থ্য কর্মীদের কাছে জানতে চান, এখন সে কী করবে? তখন তাকে পরের বুথে যেতে বলেন তারা। পরে বুথে গেলে তাকে আবার টিকা দেওয়া হয়। দ্বিতীয় বুথ থেকে তাকে তৃতীয় বুথে পাঠানো হলে সেখানেও তাকে আবার টিকা দেওয়া হয়। ওমর ফারুকের বোন ফারজানা বলেন, টিকা নেওয়ায় তার ভাই ওমর ফারুকের শরীরে থেমে থেমে জ্বর আসছিল, শরীরে ব্যথা হয়েছিল। এছাড়া তেমন কোন সমস্যা হয়নি। তাকে ডাবের পানি, দুধ ও ডিম খাওয়ানো হয়েছিল। তিন টিকা নেওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে তাকে পিজি হাসপাতালে যাওয়ার জন্য মুঠোফোনে অনেকবার ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু তার ভাই ভয়ে হাসপাতালে যেতে চাননি। পরে ফোন বন্ধ করে রাখেন।Advertisement
বুধবার বেলা ১২টার দিকে মেডিকেল টিম পরিচয়ে হাসপাতাল থেকে লোকজন এসে ওমর ফারুককে নিয়ে যায়। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ভগ্নিপতি গোলাম সারোয়ার নাহিদ। ঢাকার পিজি হাসপাতালে যাওয়ার পর গোলাম সারোয়ার টিকিট কাটতে পাঠিয়ে ওমর ফারুকসহ ডাক্তারের ওই টিম চলে যায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত ওমর ফারুকের কোনো সন্ধান মেলেনি এবং তার ফোন নাম্বারও বন্ধ পাওয়া যায়। সন্ধ্যার পর ওমর ফারুক তার মাকে ফোন করে জানান, তিনি পিজি হাসপাতালে আছেন ভালো আছেন। তাকে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে, এখনো চিকিৎসক আসেননি। আসলেই চিকিৎসা শুরু হবে। পরে ওমর ফারুকের বাবা ঢাকায় যান। তবে তার বাবার সঙ্গে ফারুকের দেখা হয়েছে কিনা এমন খবর নিশ্চিত করতে পারেনি স্বজনরা। ওমর ফারুক নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ভুঁইগড় এলাকার জামাল হোসেন প্রধানের ছেলে। তার চার বয়সী এক ছেলে আছে। গত চার বছর আগে সে ভুঁইগড় মিছির আলী মাদ্রাসা থেকে হেফজ বিভাগে পড়াশোনা শেষ করে। এরপর থেকে তিনি বেকার ছিলেন। সম্প্রতি তার সৌদি আরব যাওয়ার ভিসা হয়।Advertisement

No comments